হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কায়া কাল্লাস সম্প্রতি পূর্বের উত্থান এবং বিশেষ করে চীনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার এই পরিবর্তন ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য অত্যন্ত চিন্তার কারণ। তবে বাস্তবে বিশ্বের বহু দেশই এ পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছে, কারণ তারা বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে।
পশ্চিমা দেশগুলির এই ভীতি অমূলক নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাল ব্র্যান্ডস বলেন, কোনো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী নয়। প্রতিটি ব্যবস্থারই একসময় পতন ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের অবসান
প্রায় তিন দশক ধরে বিশ্লেষকরা বলে আসছেন যে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই তার নেতৃত্ব হারাচ্ছে। অর্থাৎ এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা ভাঙার প্রক্রিয়া নতুন কিছু নয়, বরং বহু বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা অর্থনীতির প্রভাবও চোখে পড়ার মতো হারে কমেছে। উদাহরণস্বরূপ—
জি-৭ দেশগুলোর বৈশ্বিক জিডিপি (ক্রয়ক্ষমতা সমতা অনুসারে) ২০০০ সালের ৪৩% থেকে ২০২৩ সালে নেমে এসেছে মাত্র ৩০%-এ।
অপরদিকে, ব্রিকস দেশগুলোর অংশীদারি একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮% থেকে ৩২%-এ। এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যবস্থার ঝুঁকি
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ব্রেন্ডান সিমস উল্লেখ করেছেন যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সাধারণত তিনভাবে শেষ হয়—
১️.বড় ধরনের যুদ্ধ বা ব্যর্থ প্রতিরোধের মাধ্যমে
২️.অর্থনৈতিক পতনের মাধ্যমে
১.আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির প্রতি সম্মান হারানোর মাধ্যমে
বর্তমানে এই তিনটি ঝুঁকিই বাড়ছে। ফলে "আমেরিকান বিশ্বব্যবস্থা"র পতনের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে এবং এর স্পষ্ট প্রমাণ আজকের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে দৃশ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা
পশ্চিমা মিডিয়ার দাবি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র একইসাথে একাধিক সংকট মোকাবিলা করতে পারছে না। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়া, পশ্চিম এশিয়ায় ইরান ও প্রতিরোধ আন্দোলন, পূর্ব এশিয়ায় চীন ও উত্তর কোরিয়া— সবগুলো ফ্রন্টে একসাথে চাপ সামলাতে গিয়ে আমেরিকার সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের একসাথে একাধিক যুদ্ধ করার সক্ষমতা নেই।
নতুন বিশ্বব্যবস্থার সম্ভাবনা
সব মিলিয়ে স্পষ্ট—এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়ছে এবং পৃথিবী এগোচ্ছে এক বহুমেরুকেন্দ্রিক ভবিষ্যতের দিকে। আশা করা যায়, এই পরিবর্তনের ফলে অন্তত আংশিকভাবে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দমনমূলক কাঠামো—যেমন দখলদার ইসরায়েলি শাসন—চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
আপনার কমেন্ট